‘যেতে হবে’ শুনিয়ে চলে গেলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়
![]() |
পুতুল মুখোপাধ্যায়কে গান স্যালুট |
চলে গেলেন ‘একক কন্ঠের গণসংগীত’ শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ভাষা দিবসের ঠিক ছ’দিন আগে, তাঁর এই চলে যাওয়া, তাঁর অনুরাগীদের জন্য গভীর বেদনার।
সম্প্রতি তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেখানে ভর্তি ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। আজ, শনিবার সকালে, তিনি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় বলেন, “আধুনিক বাংলা গানের খ্যাতনামা শিল্পী, গীতিকার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি শোকাহত।” তিনি আরও বলেন, “যতদিন বাংলা গান থাকবে, ততদিন ‘আমি বাংলায় গান গাই’, বাঙালির মুখে মুখে ফিরবে।”
১৯৪২ সালে বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর পিতার সঙ্গে চলে আসেন এদেশে। এরপর তাঁর পিতা প্রভাতচন্দ্র একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। গান্ধীহত্যার পর এই মাদ্রাসায় আয়োজিত একটি শোকসভায় বাবার পরামর্শে তিনি প্রথম ‘পাবলিক পারফরম্যান্স’ করেন। সেখানে গেয়েছিলেন জীবনের প্রথম গান ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম’। এবং ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় স্কুলের আয়োজনে মঞ্চস্থ নাটকে প্রথমবার গান গান।
শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বামপন্থী ঘরানার গণসংগীত শিল্পী। নকশালবাড়ি আন্দোলন তাঁকে গান লিখতে এবং সুর দিতে শিখিয়েছিল বলে তিনি দাবি করতেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্ট্যাটিসটিক্সে অনার্স নিয়ে পাস করার পর, কখনো স্কুল ১২৫ টাকার চাকরি করেছেন আবার কখনও করেছেন কলেজে অধ্যাপনা। চাকরি জীবন শেষ করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চপদ চাকরি করতে করতে।
উচ্চপদে চাকরি করলেও তাঁর মন পড়ে থাকত প্রতিবাদী মানুষের আন্দোলনের পাশে। নিশ্চিন্ত জীবনের সুখ-শান্তিকে তাই তিনি বারবার উপেক্ষা করেছেন। ছুটে গেছেন প্রতিবাদী আন্দোলনে তাঁর শিল্পী সত্তা নিয়ে। এভাবেই একক কন্ঠের গায়ক হয়েও তাঁর সংগীত হয়ে উঠেছে ‘গণসংগীত’। ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়, যার নাম ‘যেতে হবে’।
অবশেষে, ১৫ই ফেব্রুয়ারির সকাল বেলা, তিনি সত্যি সত্যি চলে গেলেন ‘স্লোগানে’র ময়দান ছেড়ে। রেখে গেলেন তাঁর সব কালজয়ী অনন্যসুন্দর প্রতিবাদী বাংলা গান। ‘স্লোগান’, ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোন তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখ’, ‘লং মার্চ’, ‘আমি বাংলায় গান গাই’-এর মত বাঙালির হৃদয় জয় করা অসামান্য সব জীবনের গান।
তাঁর এইসব প্রতিবাদী ও বিপ্লবী চেতনার গান জনগণকে বারবার আন্দোলিত করেছে। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। তাঁর এই অবদানকে মনে রেখেই, রাজ্য সরকার দিয়েছেন একের পর এক সম্মান। রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ সহ পেয়েছেন একাধিক সংগীত সম্মান। এদের মধ্যে, ‘সঙ্গীত সম্মান’, ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’, ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ ইত্যাদি। শেষ যাত্রায় পেলেন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট।
‘বাংলা সাহিত্য : অনলাইন ম্যাগাজিনে’র পক্ষ থেকে তাঁর জন্য রইল সংগ্রামী অভিবাদন ও বিনম্র শ্রদ্ধা।
-----------xx-----------
মন্তব্যসমূহ