সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বেস সাহিত্য উৎসব ২০২৪

বেস সাহিত্য উৎসব ২০২৪

BASE-Literary-Festival-2024

BASE Literary Festival 2024

বাঙালি মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার বহু কারণ বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত করা হয়, তার মধ্যে অনেক কিছু নিয়েই বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু একটি কারণ সম্পর্কে সকলেই সহমত পোষণ করেন, মুসলিম মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর অভাব। সেই অভাব যে পূরণ হয়েছে, সেই প্রমাণ হাজির করতেই বেঙ্গলি অ্যাকাডেমিয়া ফর সোশ্যাল এম্পাওয়ারমেণ্ট বা সংক্ষেপে বেস সম্প্রতি একদিনের সাহিত্যসভার আয়োজন করেছে রবীন্দ্রতীর্থে (নিউটাউন) গত ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

ঐ সভায় ষাটের অধিক মুসলিমসহ অন্যান্য প্রান্তিক সমাজের সাহিত্যিক, অনুবাদক, আলোচক, অধ্যাপক ও শিক্ষকদের উপস্থিতি শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে মুসলিম সমাজে নিজস্ব পরিসর সৃষ্টি করে নেওয়ার প্রমাণ উপস্থাপিত করে, যা উল্লেখিত সাহিত্য সভার নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য দিক। ঐ সাহিত্য সভার দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সভার মূখ্য আলোচ্য বিষয় "প্রান্তিক সাহিত্যচর্চার পরিসর"। তৃতীয় কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে কোন অংশেই কম নয় যে বিষয়টি তা হল প্রান্তিক সাহিত্যের দুই ধারা দলিত সাহিত্যিক এবং মুসলিম প্রান্তিক সাহিত্যিকদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের এক বলিষ্ঠ পরিসর গড়ে তোলার প্রয়াস। এই সভায় আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির সহ-সভাপতি ডঃ আশীষ হীরা, প্রখ্যাত গবেষক এবং সাহিত্যিক অধ্যাপক অসিত বিশ্বাস, অধ্যাপক সুরঞ্জন মিদ্দা, নবান্ন পত্রিকার সম্পাদক নীতীশ রায় প্রমুখ গুণীজনেরা।

অন্যদিকে তথ্যসমৃদ্ধ, গঠনমুলক, বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা সাহিত্যসভাটিকে সাহিত্য উৎসবে পর্য্যবসিত করে সাফল্যমন্ডিত করতে পেরেছে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি মূলত পাঁচটি পর্বে বিভক্ত ছিলো। প্রতিটি পর্বের সঞ্চালকরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সভাকে পরিচালনা করেন। প্রত্যেক বক্তার গবেষণামুলক উপস্থাপনা সভাকে বিশেষস্তরে উন্নীত করেছে।

এই সাহিত্য উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ভাষা, ধর্ম ও আর্থিক দিক দিয়ে প্রান্তিক মানুষজনেদের সাহিত্যচর্চা ও ভাব বিনিময়ের একটি পরিসর তৈরি করা, যা এই আয়োজনের মাধ্যমে সার্থকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সভার প্রথম পর্বের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কাজী মহম্মদ শেরিফ সাহেব, সোনা বন্দোপাধ্যায়। সোনা বন্দোপাধ্যায় যিনি প্রান্তিক সমাজের আপেক্ষিকতা ও ব্যাপ্তি সুন্দরভাবে তুলে ধরেন। অধ্যাপক সুরঞ্জন মিদ্দার বক্তব্যের মধ্যে গবেষণা ও সৃষ্টিমুলক দিক প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি ব্যক্তিসত্বা ও পদমর্যাদার থেকে মুক্ত কলমের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

দ্বিতীয় পর্বে অধ্যাপক আবু সিদ্দিক তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রান্তিক সমাজের সাহিত্যের সংকট ও অসহায়তার কথা ব্যক্ত করেছেন। মনোয়ারা খাতুন "মুসলিম বিয়ের গান", যে প্রান্তিক লোকগাঁথার অঙ্গ, সেটি হৃদয়গ্রাহী করে পরিবেশন করেন।

তৃতীয় পর্বে অধ্যাপক সাইফুল্লা শামীম তাঁর গভীর প্রজ্ঞা, অধ্যবসায় ও দক্ষতা সহযোগে সমকালীন প্রান্তিক সমাজের সাহিত্য-সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখান। এই পর্বেই মনিরুদ্দিন শেখ, সাহাবুদ্দিন গাজী অত্যন্ত দৃঢ় ও স্বকীয়ভাবে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন।

সভার দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ চতুর্থ পর্বের পরিবেশনাও ছিলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, তথ্যবহুল ও দিকনির্দেশনাময়। সমাজকর্মী আয়েশা খাতুন, আইরিন শবনম, অসিত বিশ্বাস, নীতিশ রায়, তসলিম আরিফ সকলেই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রান্তিক সাহিত্য চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন ডঃ আশীষ হীরা তাঁর বক্তব্যের মধ্যে শ্রম এবং জোটবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। কিভাবে সকল প্রান্তজন মিলেমিশে, সহযোগিতা ও শ্রমের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে উপনীত হতে পারেন তার সম্ভাব্য নির্দেশনা ব্যক্ত করেছেন।

সভার অন্তিম তথা পঞ্চম পর্বে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিলো মনোমুগ্ধকর ও হৃদয়গ্রাহী। পরিবেশন করেন সাঈদ উল ইসলাম, সোমি আকতার, বেনজির রহমান, তানিয়া পারভীন ও সাবিনা সৈয়দ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তথা মডারেটরগণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সভাকে এগিয়ে নিয়ে যান। এদিন সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন হাসান ধাবক, শেখ কবিতা, সাঈদ উল ইসলাম, তানিয়া পারভীন এবং সাবিনা সৈয়দ। সমগ্র অনুষ্ঠানের চিত্রগ্রহণের কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন অধ্যাপক সাইন শেখ।

ব্যস্ত তিলোত্তমার বিশ্ববাংলা দ্বারের অনতিদূরে হরেক রকম সুগন্ধি ফুল ও সবুজ ঘাসের চাদরে আবৃত এক মনোরম পরিবেশে, নির্মল জলাধারের পাশে সকলের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। বিখ্যাত কয়েকজন প্রকাশক তাঁদের বই, ম্যাগাজিন প্রদর্শন করেন। কবি-সাহিত্যিকরা একে অপরকে নিজেদের লেখা বই উপহার দেন। নিয়ন আলোয় সান্ধ্যকালীন চায়ের আড্ডায়ও সাহিত্য চর্চা বেশ জমে উঠেছিলো।

এক কথায় প্রান্তিক সাহিত্যের দুই ধারা, দলিত সাহিত্য এবং মুসলিম সাহিত্য কে সম্যক গুরুত্ব দিয়ে পরষ্পরের মধ্যে এক মেলবন্ধনের প্রচেষ্টা সফলভাবে সম্পন্ন হয় বেস আয়োজিত এই সাহিত্য উৎসবের মধ্য দিয়ে। পিছিয়ে রাখা সমাজের সৃজনশীলতা অন্মেষণ করে বৃহত্তর সমাজের মাঝে উপস্থাপন করাই হলো এই সাহিত্য উৎসবের মূল ভাবনা।

দর্শক আসন অলঙ্কৃত করেছেন জেএনইউ, যাদবপুর, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যপ্রেমী গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা, অধ্যাপক মুখলেসুর রহমান, পুলিশ অফিসার ফিরদৌস রহমান, সমাজকর্মী সেলিনা বেগম, প্রাক্তন জিএসটি অফিসার নিজামুল ইসলাম, সমাজসেবী জাকির হোসেন, অসিত রায় সহ সমাজের বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত বিদ্বজনেরা।

বেস এর সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ্ অসাধারণ সাংগঠনিক শক্তির প্রমান রেখেছেন এই সাহিত্য সভার আয়োজনে এবং পরিচালনায়। আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মতিউল ইসলাম, মুস্তাকিম রশিদ, সামিয়া রোশনি, হাফিজুর রহমান, মনিরুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।

মন্তব্যসমূহ

বাংলা সাহিত্য : বহুল-পঠিত লেখাগুলো পড়ুন

পশ্চিবঙ্গে কবিতা উৎসব ২০২৩, উদ্বোধন করলেন ব্রাত্য বসু

পশ্চিবঙ্গের বৃহত্তম কবিতা উৎসব ২০২৩ উদ্বোধন করলেন ব্রাত্য বসু ফারুক আহমেদ বুধবার রবীন্দ্র সদন একতারা মঞ্চে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত কবিতা আকাদেমির আয়োজনে ৭ম কবিতা উৎসব ২০২৩-এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান দাগ কেটেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ভারতের বৃহত্তম কবিতা উৎসবের শুভ উদ্বোধন করলেন উচ্চশিক্ষা এবং বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি শ্রী ব্রাত্য বসু, উপস্থিত ছিলেন সভামুখ্য সুবোধ সরকার, মাননীয় সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, আলাপন বন্দ্যেপাধ্যায়, ব্রততী বন্দ্যেপাধ্যায়, প্রণতি ঠাকুর, কৌশিক বসাক প্রমুখ। রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ, বাংলা আকাদেমি সভাগৃহ, জীবনানন্দ সভাঘর, অবনীন্দ্র সভাঘর, নন্দন-৩, চারুকলা পর্ষদ সংলগ্ন প্রাঙ্গণ ও একতারা মুক্তমঞ্চে উৎসব শুরু হয়েছে। ৩ মে থেকে চলবে ৬ মে ২০২৩ পর্যন্ত। ভারতের বৃহত্তম কবিতা উৎসবে দ্বিতীয় দিনেই শিশির মঞ্চে কবিতা পাঠ করলেন কবি ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট কবি।

আসাদ চৌধুরী এখন থেকে চিরজীবিত : মুহম্মদ নূরুল হুদা

বাংলা ও বাঙালির প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী এখন থেকে চিরজীবিত বাংলা ও বাঙালির প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী মুহম্মদ নূরুল হুদা, মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি, বাংলা একাডেমির ফেলো ও সাবেক পরিচালক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ চৌধুরী আজ ০৫ই অক্টোবর ২০২৩ কানাডার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। এখন থেকে তিনি চিরজীবিত। তিনি অনন্তলোকে চিরশান্তিতে থাকুন। আসাদ চৌধুরী আধুনিক বাংলা কবিতায় এক অনিবার্য নাম, বাংলাদেশের ষাটের দশকের কবিতা আন্দোলনের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি ও বাংলাদেশের জনজীবন যেমন অনুপম ব্যঞ্জনায় ভাস্বর হয়েছে তেমনি এদেশের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্য অসাধারণ স্বাতন্ত্র্যে ভাষারূপ পেয়েছে। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, জীবনী, ভ্রমণকাহিনিসহ বিচিত্র সাহিত্যক্ষেত্রে ছিল তাঁর সফল ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ। সমকালীন বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন বহুমাত্রিক স্রষ্টা। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর 'কোন অলকার ফুল', 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' কিংবা 'সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু'-এর মতো বইগুলো এদেশের কয়েক প্রজন্মের

লেখা পাঠাতে চান? লেখা পাঠানোর নিয়ম জানতে ক্লিক করুন নিচের 'লেখা পাঠান' ট্যাবে

-----------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------

🙏 সবিনয় আবেদন 🙏

সুধী পাঠক ও লেখকবন্ধু,

বাংলা সাহিত্য : অনলাইন ম্যাগাজিন যেহেতু কোন বিজ্ঞাপন গ্রহণ করে না, সেহেতু ম্যাগাজিন পরিচালনার সমস্ত খরচ ম্যাগাজিন কতৃপক্ষকেই বহন করতে হয়। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এই ভার বহন করা দুরহ হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের পত্রিকার গ্রহক হওয়ার অনুরোধ করছি। 

গ্রাহক মুল্য বছরে ১০০ (এক শত) টাকা মাত্র।

নিচের ব্যাংক একাউন্টে গ্রাহক চাঁদা প্রদান করে Transaction ID ইমেল করে পাঠালেই আপনি গ্রাহক হয়ে যাবেন।

আপনারা চাইলে আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তাও করতে পারেন।

👩 যে কোন পরিমাণ ( সর্বনিম্ন 10 টাকা / দশ টাকা ) সহায়তা সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হবে।
অর্থ পাঠানোর একাউন্টসের বিবরণ :
1) Account Holder's Name : K. N. Mondal
2) Bank Name : Bank Of Baroda
3) Account No. 2759-0100-0151-24
4) IFS CODE : BARB0BRAPUR (Fifth Character is ZERO)
অর্থ পাঠালে অবশ্যই ইমেল করে ট্রাঞ্জাকশন আইডি (Transaction ID) পাঠাতে ভুলবেন না।
আপনার পাঠানো অর্থের অবশ্যই প্রাপ্তি স্বীকার করা হবে।
আমাদের EMAIL ID : nehacomputeraids@gmail.com