প্রভাত চৌধুরী। অধুনান্তিক কবিতা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধাপুরুষ এবং কবিতা পাক্ষিকের প্রাণপুরুষ। - লিখেছেন আলী হোসেন।
বিশ শতকের ষাটের দশকে শুরু। শেষ করলেন একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। কবি প্রভাত চৌধুরী লিখেছিলেন, 'আমি মূলত পক্ষাঘাতগ্রস্ত অথর্ব সভ্যতার জারজ সন্তান'। কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি? গবেষকরা নিশ্চয়ই তা অনুসন্ধানে বসবেন।
প্রভাত চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন বাঁকুড়া জেলায়। পরে কর্মসূত্রে আসেন কলকাতার ভবানীপুরে, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। তবে কবিতা নিয়ে তার আলাদা বাসরঘর গড়ে উঠেছিল পটলডাঙ্গা স্ট্রিটে।
'কৃত্তিবাস' পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শুধু প্রেমিকার জন্য'। কবিতা নিয়েই ছিল তার দিনযাপন এবং নিশিযাপন। তবে শুধু কবিতার জন্যে নয়, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের জন্যেও নিবেদিত ছিল তাঁর মনপ্রাণ।
আশির দশকে সাময়িকভাবে জীবন নদীর ভাটার টানে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেও নয়ের দশকে শুরু হয় নতুন উদ্যমে পথ চলা। এই সময়ই শুরু করেন (১৯৯৩ সাল থেকে) পত্রিকা ‘কবিতা পাক্ষিক’ প্রকাশ ও প্রচার। এরপর এই পত্রিকাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে বাংলার নতুনধারার তরুণ কবিদের নতুন প্ল্যাটফর্ম। ক্রমশ বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই পত্রিকা। এখান থেকেই প্রকাশিত হতে থাকে তরুণ কবিদের নতুনধারার কাব্যগ্রন্থও।
নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে তিনি নিজের মতো করে বাংলা কবিতার পোস্ট মডার্ন চরিত্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল 'সাদা খাতা’, ‘সাক্ষাৎকার’, ‘নোটবই', ‘উত্তরপর্বের কবিতা’, ‘সুসমাচার' ইত্যাদি
গত দু-বছর ধরে তিনি কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। চলছিল ডায়ালিসিস। এর মধ্যেই আক্রান্ত হন করোনায়। শেষপর্যন্ত বুধবার নিলেন চিরবিদায়।
কবি নাসির হোসেনের পর প্রভাত চৌধুরীর চলে যাওয়া কবিতা পাক্ষিক এর জন্য আরও একটি বড় ধাক্কা।
‘বাংলা সাহিত্যে’র সঙ্গে ছিল প্রভাত চৌধুরীর গভীর যোগাযোগ। অভিভাবকের মতো তিনি দিতেন নির্দ্বিধায় নানা পরামর্শ। আমাদের অনুরোধে তৎক্ষণাৎ লিখে দিতেন কবিতা। প্রভাত চৌধুরীর মৃত্যুতে তাই ‘বাংলা সাহিত্য’ হারালো আরও একজন অভিভাবককে এবং বাংলা লিটল ম্যাগাজিন-কেন্দ্রিক কবিতাচর্চার আন্দোলনের হলো এক অপরিসীম ক্ষতি।
মন্তব্যসমূহ