কিছু কলা-কৌশল রপ্ত করতে পারলে আপনার লেখা হয়ে উঠতে পারে আরও আকর্ষণীয়।
লেখালেখি। এই কাজটা হয়তো আপনাকে প্রতিদিনই করতে হয়। কিন্তু আপনি কি চান আপনার লেখা যেন আর দশজনের থেকে আলাদা করে চেনা যায়?
ভালো লেখক হওয়ার কলাকৌশল মানলেই যে আপনি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক বনে যাবেন তা নয়। কিন্তু আপনি যদি একজন ভালো লেখক হতে চান, পেশাদারদের কিছু পরামর্শ মেনে চলা ভালো।
লেইন গ্রিন একজন 'ভাষা গুরু।' নামকরা সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্টের সাবেক আর্টস এডিটর এবং কলামিস্ট। ভালো লেখার জন্য তার সাতটি পরামর্শ:
১. শুরুতেই মনোযোগ কাড়ুন
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionএমনভাবে শুরু করুন, যাতে পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারেন।
যে বিষয়টি আপনি যুক্তি দিয়ে তুলে ধরতে চাইছেন বা যে গল্পটি আপনি বলতে চাইছেন, সেটি ভুলে যান। শুরু করুন এমন কোন একটা বিষয় বা উদাহারণ দিয়ে, যাতে আপনি আপনি পাঠকের মনোযোগটা প্রথমেই কেড়ে নিতে পারেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মারকোয়েযের 'ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউডে'র শুরুর লাইনটার কথাই মনে করা যাক।
"বহু বছর পরে, যখন সে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি হলো......
কে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে? কেন? একটা লেখার শুরুতেই পাঠকের মনোযোগ কেড়ে নেয়ার জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী লাইন আর কী হতে পারে?
২. ছোট ছোট বাক্যে লিখুন
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionছোট ছোট বাক্যে লিখুন।
ছোট বাক্যে লেখার মানে এই নয় যে আপনি আপনার লেখার গুরুত্ব কমিয়ে ফেলছেন। 'সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।' কিন্তু সহজ ছোট বাক্যে লেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটা কেবল স্টাইলের ব্যাপার নয়, মানুষের স্মৃতি আসলে কিভাবে কাজ করে, তার সম্পর্ক আছে এর সঙ্গে।
একটি দীর্ঘ বাক্য বোঝা এবং মনে রাখার জন্য কিন্তু যথেষ্ট মনোযোগ দেয়ার দরকার হবে। এটা বেশ কঠিন।
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionভালো লেখায় থাকে একটা ছন্দ।
পাঠককে কোন লেখার ব্যাকরণ বুঝে পাঠোদ্ধারের জন্য এত বেশি চেষ্টার মধ্যে না ফেলাটাই উচিৎ। লেখক হিসেবে আপনার চেষ্টা হবে বরং আপনি যা বলতে চান সেটার দিকেই তার মনোযোগ আকর্ষণ করা।
৩. একই সঙ্গে দীর্ঘ বাক্যও ব্যবহার করুন
সেই প্রবাদটা নিশ্চয়ই মনে আছে। কোন কিছুই বেশি করা ঠিক নয়। সব কিছুতেই মাত্রা মেনে চলা ভালো।
কাজেই আপনার লেখার বেশিরভাগ বাক্য ছোট হওয়া ভালো, কিন্তু পুরো লেখাটাই যদি কেবল ছোট বাক্যে লেখেন, সেটি পড়তে খুব একঘেঁয়ে হয়ে উঠতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই আপনি চান না।
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionশব্দে ফুটিয়ে তুলুন গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ
৪. সুনির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করুন
ছোট বাক্যে লেখা ছাড়াও কোন শব্দ ব্যবহার করছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেসব বিষয় আপনি ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেন- যেমন কোন গন্ধ, স্বাদ বা আপনার পা দিয়ে স্পর্শ করছেন এমন কিছু, সেসবের বর্ণনার ক্ষেত্রে একেবারে সুনির্দিষ্ট শব্দ চয়ন খুবই দরকার। পাঠকের মনে যেন আপনি সঠিক ছবিটি ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
যে দৃশ্যকল্প আপনি তৈরি করতে চান, এবং যে ভাষায় আপনি সেটি করতে চান, তারা যেন পরস্পরের উপযোগী হয়। যাতে আপনার বক্তব্য সুস্পষ্ট এবং স্মরণীয় হয়ে উঠে।
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionবেছে বেছে শব্দ ব্যবহার করুন।
৫. বিমূর্ত শব্দ ব্যবহার পরিহার করুন
এগুলো আসলে প্রাণহীন ভুতুড়ে শব্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, রাজনীতিক, আমলারা এ জাতীয় গুরুগম্ভীর ভারিক্কি শব্দ প্রচুর ব্যবহার করেন। তাদের আড়ষ্ট গদ্য এসব শব্দে ভারাক্রান্ত থাকে। সহজে কল্পনা করা যায় এমন কোন কিছু বা শব্দ দিয়ে দিয়ে আপনার লেখার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলুন।
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionনিজের লেখা নিজেকে পড়ে শোনান।
৬. নিজের লেখা নিজেকে পড়ে শোনান
লেখা শেষ করার পর সেটি সম্পাদনা-পুনর্লিখন যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী সেটি নিজেই নিজেকে পড়ে শোনানো। এই কাজটি করলে দেখতে পাবেন আপনার লেখায় কোথায় অসঙ্গতি আছে, কোথায় পরিমার্জন দরকার। কোথায় লেখাটির ছন্দপতন ঘটেছে সেটিও আপনার নজরে আসবে।
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGESImage captionলেখার শেষ যেন পাঠকের মনে গেঁথে থাকে দীর্ঘক্ষণ
৭. সমাপ্তি টানবেন যেভাবে
লেখার সমাপ্তি টানুন এমন কোন শব্দ বা বাক্যে, যাতে সেটা পাঠকের মনে একটা শক্ত ছাপ রাখতে পারে। আপনার লেখার এই শেষ শব্দগুলোই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সেই শব্দগুলো খুব ভেবে-চিন্তে ব্যবহার করুন।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্যসমূহ