থিম্পু, ২০শে অক্টোবর— তৃতীয়বারের জন্য কোনও নতুন দলকে নির্বাচিত করল ভুটান।
গত নির্বাচনে শাসকদল দ্রুক ফুয়েনসাম সোগপা (ডি পি টি)-কে পরাস্ত করে ভুটান বেছে নিয়েছিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পি ডি পি)-কে। এবারে, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ প্রথমদফার নির্বাচনেই শোচনীয়ভাবে হারে পি ডি পি। ভুটানের সংবিধান অনুযায়ী প্রথমদফায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আর চূড়ান্তদফায় লড়াই হয় প্রথম দুটি দলের মধ্যে। চূড়ান্তদফার ভোট ছিল বৃহস্পতিবার। লড়াই ছিল ডি পি টি-র সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তৈরি দ্রুক নিয়ামরুপ সোগপা (ডি এন টি)-র। এবং আবারও ডি পি টি-কে বসতে হবে বিরোধী বেঞ্চে। স্পষ্ট জনাদেশ পেয়েছে নতুন দল ডি এন টি।
সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ৪৭টি আসনের মধ্যে ডি এন টি একাই জিতেছে ৩০টি আসনে। ১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে ডি পি টি। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস করা লোটে শেরিং।
শেরিংয়ের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার টেলিফোনে শেরিংকে তিনি জানিয়েছেন, ভুটানের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার অভিনব সম্পর্ককে আরও জোরদার করাই হবে ভারতের অগ্রাধিকার। ভারত সফরে আসার জন্য শেরিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর আবেদন শেরিং গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে দিল্লি।
প্রথম ১২০-দিনের মধ্যে পঁচিশদফা প্রতিশ্রুতিপূরণের অঙ্গীকারের কথা বলে নির্বাচনে প্রচার চালিয়েছিল ডি এন টি। দলের নির্বাচনী ইশ্তেহার ছিল জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মিশ্রণ। চূড়ান্তদফায় দুই দলই ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রথমদফার নির্বাচনে ডি পি টি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও, সমর্থনের হার সবচেয়ে বেশি ছিল ডি এন টি-র পক্ষে। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ডি এন টি অধিকাংশ আসন জেতে দেশের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে, যেখানে ডি পি টি-র জয় আসে মূলত পূর্বাঞ্চল থেকে। প্রথম দফায় যাঁরা পি ডি পি এবং বি কে পি পার্টিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই চূড়ান্তদফায় বেছে নেন ডি এন টি-কে। ভোটদানের হার ছিল ৭১ শতাংশ, পাঁচ বছর আগে সাধারণ নির্বাচনের (৬৬ শতাংশ) চেয়ে বেশি।
ডি পি টি-র ইশ্তেহারে ‘ভারত সরকার এবং ভারতের জনগণের সঙ্গে দুরন্ত সম্পর্ক রক্ষা ও জোরদার করার অঙ্গীকার’ থাকলেও, ডি এন টি-র ইশ্তেহারে বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে ছিল না কোনও আলাদা বিভাগ, অবশ্য একাধিকবার এসেছে ভারতের নাম। গতবারের নির্বাচনে ভারত ইস্যু হলেও, এবারে তা ছিল না।
এখন প্রতিশ্রুতি রক্ষা ডি এন টি-র কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কোথা থেকে আসবে প্রতিশ্রুতিপূরণের অর্থ। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জি ডি পি-র ১০৮.৬ শতাংশ। ভয়াবহ বেকারি। ভুটানের সংবিধান অনুযায়ী রাজা এখনও সর্বময় প্রশাসনিক প্রধান। রাজার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না। সংসদের উচ্চকক্ষে ৩০ জন সদস্যের মধ্যে ৫-জনই রাজার মনোনীত। বাকি ২৫ জন নির্বাচিত হলেও, কোনও সদস্যই কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না।
ডোকলাম ইস্যুতে ভারত-চীনের টানাপোড়েনের ইতিমধ্যেই নিস্পত্তি হয়েছে। উভয় পক্ষই জয়ী হয়েছে বলে দাবি করেছে। একটি জমি নিয়ে ভুটান এবং চীনের দাবিকে কেন্দ্র করেই এই বিতর্ক, যদিও এ বিষয়ে বস্তুতই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভূটান। সম্প্রতি ভুটান ডাবল ট্যাক্সেশান অ্যাভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে। সার্ক দেশগুলির মধ্যে ভারত বাদে ভুটানই একমাত্র দেশ যারা যোগ দেয়নি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে।
উৎস : গণশক্তি
মন্তব্যসমূহ